ভূমিকা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের পরাশক্তি বা সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভাব ঘটে। পরস্পরবিরোধী রাষ্ট্রজোট প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ না হয়ে পরস্পরের প্রতি যে যুদ্ধভাব(1945-1992) বিরাজ করেছিল বা সংগ্রামে লিপ্ত ছিল তাকেই ঠাণ্ডা লড়াই বলে অভিহিত করা হয়।
মার্কিন যুক্তিরাষ্ট্র ও সােভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রজোটের মধ্যে সংঘটিত ঠান্ডা যুদ্ধের এই দায়বদ্ধতা নিয়ে ইতিহাসবিদ ও রাষ্ট্রত্ত্ববিদদের মধ্যে পরস্পরবিরােধী ধারণা লক্ষ করা যায়। এই পরস্পরবিরােধী ধারণাগুলিই হল ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক ধারণা নামে পরিচিত।
সমর্থকগণ: ঠান্ডা যুদ্ধে সংশােধনবাদী তাত্ত্বিক ধারণার পথপ্রদর্শক ছিলেন ওয়াল্টার লিপম্যান। এই ধারণার অন্যান্য কয়েকজন সমর্থক ছিলেন ডি. এফ. ফ্লেমিং, গ্যাব্রিয়েল কলকো, গার অ্যালপারােভিজ, হেনরি এ. ওয়ালেস, ওলিভার এডওয়ার্ডস, উইলিয়াম অ্যাপেলম্যান উইলিয়ামস, ওয়াল্টার লেফেভর, নরম্যান গ্রেবনের ডেভিড হরােউইজ, লয়েড গার্ডনার প্রমুখ। মূল বক্তব্য: সংশােধনবাদী তাত্ত্বিক ধারণার সমর্থকগণের মূল বক্তব্য হল—সােভিয়েত ইউনিয়নের সম্প্রসারণশীল নীতি নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতি ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনা ঘটিয়েছিল। এই ধারণা অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সােভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিহত করতে না পেরে নিজস্ব প্রভাবাধীন অঞ্চলের সম্প্রসারণ ঘটাতে শুরু করে ও ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনাকে অবশ্যম্ভাবী করে তােলে। বাস্তববাদী ধারণা
সমর্থকগণ: ঐতিহ্যবাহী এবং সংশােধনবাদী উভয় ধারণার মধ্যবর্তী অবস্থান গ্রহণ করে একদল গবেষক, ঐতিহাসিক ঠান্ডা যুদ্ধের যে তত্ত্ব পেশ করেছেন তা 'বাস্তববাদী তত্ত্ব' নামে পরিচিত। এই তত্ত্বের কয়েকজন সমর্থক হলেন হ্যানস্ জে. মরগ্যানথাউ, লুই জে. হ্যালে, রিচার্ড ক্ৰকেট, জন লুইস গ্যাডিস প্রমুখ। মূল বক্তব্য: বাস্তববাদী ধারণার সমর্থকেরা ঠান্ডা যুদ্ধের জন্য সােভিয়েত ইউনিয়ন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনাে-একটি পক্ষকে চূড়ান্তভাবে দায়ী করায় বিশ্বাসী নন। এঁদের ধারণায় ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনার জন্য সােভিয়েত বা মার্কিন উভয়পক্ষই দায়ী ছিল অথবা কোনাে পক্ষই দায়ী ছিল না।
অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাখ্যা:
কেউ কেউ মনে করেন যে, ঠান্ডা লড়াই ছিল প্রকৃতপক্ষে আমেরিকার অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের অন্যতম দিক। গ্যাব্রিয়েল কলকো, কর্ডেল প্রমুখ এই অভিমতের সমর্থক। গ্যাব্রিয়েল কলকো দেখিয়েছেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। আমেরিকা তার এই আর্থিক শক্তিকে ব্যবহার করে বিশ্ব-অর্থনীতির প্রধান চালকের আসন লাভের চেষ্টা করেছিল। এই লক্ষ্যে আমেরিকা তার বিদেশনীতিতে পরিবর্তন ঘটায়।
মার্শাল পরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে বিপুল পরিমাণ অর্থসাহায্য দিয়ে আমেরিকা যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরােপে নিজেকে পরিত্রাতা হিসেবে তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বৈদেশিক ক্ষেত্রে আমেরিকার অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়নের প্রধান বাধা ছিল সােভিয়েত রাশিয়া। উপসংহার: রাশিয়া ও তার অনুগত রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে আমেরিকা একপ্রকার ক্রুসেড ঘােষণা করে। এর ফলেই ঠান্ডা লড়াইয়ের সূত্রপাত ঘটে।
Post a Comment