HS HISTORY SUGGESTIONS 2024

Q. সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের প্রসারে হবসন ও লেনিনের ব্যাখ্যা সম্পর্কে আলোচনা কর। 


ভূমিকা: 

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাংবাদিক জে. এ. হবসন এবং রাষ্ট্রনেতা ভি. আই. লেনিন ঊনবিংশ শতাব্দীতে সাম্রাজ্যবাদের উৎস সম্পর্কে নিজ নিজ তত্ত্ব পেশ করেছেন-যা 'হবসন-লেনিন তত্ত্ব' নামে খ্যাত।


■ সাম্রাজ্যবাদ প্রসঙ্গে হবসন তত্ত্বঃ


মূলকথা:


বাড়তি মূলধনের চাপঃ 

হবসন তাঁর বিখ্যাত 'Imperialism: A study' গ্রন্থে বলেছেন, অর্থনৈতিক লক্ষ্যই ছিল সাম্রাজ্যবাদের মূল চালিকা শক্তি। তাঁর মতে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় পুঁজিপতিরা মুনাফা লাভের মাধ্যমে মূলধন সঞ্চয় করে। সঞ্চিত এই মূলধন উপনিবেশে বিনিয়োগ করে আরও মুনাফা বৃদ্ধির জন্য পুঁজিবাদীরা তাদের নিজ দেশের সরকারকে উপনিবেশ দখলে বাধ্য করে। সুতরাং সাম্রাজ্যবাদের মূল অর্থনৈতিক শিকড় হল, উপনিবেশে লগ্নির জন্য 'বাড়তি মূলধনের চাপ'।


② নতুন অর্থনৈতিক শক্তির সক্রিয়তা: 

সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে হবসন পুঁজির বিকাশ হেতু অর্থনৈতিক শক্তির সক্রিয়তার কথা বলেছেন। সম্পদের অসম বণ্টনের ফলে যে অতিরিক্ত মুনাফা জমেছিল তা থেকে অতিরিক্ত পুঁজি এসেছিল। এই পুঁজি নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে পুঁজিপতিরা আরও বেশি মুনাফা অর্জনের পরিকল্পনা করে।


ঔপনিবেশিক শোষণ: 

সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি তাদের উপনিবেশ থেকে সস্তায় কাঁচামাল সংগ্রহ এবং উপনিবেশের বাজারে নিজেদের শিল্পজাত পণ্য সামগ্রী বিক্রি করে। এর মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিধর রাষ্ট্রের পুঁজিপতিরা আরও বেশি মুনাফা লাভ করে। অপরদিকে ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলি শোষিত হতে থাকে।



প্রতিকার

হবসনের মতে, পুঁজিপতিদের বাড়তি মূলধন


সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে বণ্টিত হলে বা সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় হলে সমাজের সুষম বিকাশের পাশাপাশি সাম্রাজ্যবাদেরও অবসান ঘটবে।


হবসন তত্ত্বের সমালোচনা:


① হবসন বলেছেন, শিল্পবিপ্লবের পরবর্তীতে পুঁজিপতিদের মূলধন বৃদ্ধির ফলে সাম্রাজ্যবাদের উদ্ভব হয়। কিন্তু শিল্পবিপ্লবের পূর্ববর্তী সময়ের সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে তিনি নীরব থেকেছেন।


② জার্মানি বা রাশিয়া শিল্পোন্নত দেশ না হলেও তারা উপনিবেশ দখলে পিছিয়ে ছিল না।


③ শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী সময়ে ব্রিটেন বা ফ্রান্স পুঁজি বিনিয়োগ করেছিল দক্ষিণ আমেরিকা এবং রাশিয়াতে। কিন্তু এই সব দেশে তাদের উপনিবেশ ছিল না।


■ সাম্রাজ্যবাদ প্রসঙ্গে লেনিন তত্ত্বঃ


মূলকথা:

সাম্রাজ্যবাদের উৎস হল পুঁজিবাদ : 

বিখ্যাত কমিউনিস্ট রাষ্ট্রনেতা ভি. আই. লেনিন তাঁর 'Imperialism: The High- est Stage of Capitalism' গ্রন্থে বলেছেন- পুঁজিবাদের জঠরেই সাম্রাজ্যবাদের জন্ম। পুঁজিবাদীরা মূলধন বিনিয়োগ করে আরও মুনাফার উদ্দেশ্যে অনগ্রসর দেশগুলিতে উপনিবেশ স্থাপন করে। যার সূত্র ধরে পরবর্তীকালে উপনিবেশগুলিতে শুরু হয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির সাম্রাজ্যবাদী কার্যকলাপ।


পুঁজি বিনিয়োগ ও সাম্রাজ্যবাদ: 

লেনিনের মতে, শিল্পোন্নত দেশগুলির পুঁজিপতি শ্রেণি নতুন উপনিবেশ দখল করে সেখানে পুঁজি বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী ছিল। লেনিনের মতে, "সাম্রাজ্যবাদ হল পুঁজিবাদের প্রত্যক্ষ সম্প্রসারিত রূপ"। ইউরোপীয় প্রধান শক্তিগুলির ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবিস্তারের পেছনে প্রধান চালিকা শক্তি ছিল পুঁজির বিনিয়োগ।


উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন 2024


পুঁজির আন্তর্জাতিকীকরণ: 

পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের বশবর্তী হয়ে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য নিজ নিজ অভ্যন্তরীণ বাজার ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাজার দখলে সচেষ্ট হয়। এর ফলে পুঁজির আন্তর্জাতিকীকরণ ঘটে।


পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দিতা: 

উপনিবেশ সীমিত হওয়ায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিধর পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে উপনিবেশ দখলের জন্য পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। দেখা দেয় যুদ্ধ। তাই লেনিন বলেছেন, পুঁজিবাদী অর্থনীতি হল যুদ্ধের জন্মদাতা।


লেনিন তত্ত্বের সমালোচনা:


① ডেভিড থমসন মনে করেন, শিল্প বিপ্লব বা পুঁজিবাদী অর্থনীতির উদ্ভব অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীতে শুরু হলেও তার আগেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি কেন উপনিবেশ স্থাপন করে, লেনিন তত্ত্বে সে ব্যাখ্যা দেওয়া হয় নি।


② লেনিনের তত্ত্বে কয়েকটি অসুবিধাজনক সত্যকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের বিদেশে বিনিয়োগের অধিকাংশই ঔপনিবেশিক দেশে হয়নি। যা হয়েছে তা হল দক্ষিণ আমেরিকা ও রাশিয়ায়।


উপসংহার: 

সাম্রাজ্যবাদের ব্যাখ্যা হিসেবে হবসন-লেনিন তত্ত্ব এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছিল। সাম্রাজ্যবাদ ব্যাখ্যায় নানা ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলেও এই তত্ত্বের গুরুত্বকে কখনোই অস্বীকার করা যায় না।

Post a Comment

Previous Post Next Post