সন্ন্যাসী বিদ্রোহ ছিল বাংলার বুকে প্রথম সার্থক বিদ্রোহ। দেশ ভক্তি মূলক রণধ্বনি 'ওঁ বন্দেমাতরম' তাদের মুখেই প্রথম ধ্বনিত হয়। যদিও এই দেশ ভক্তি ছিল সীমাবদ্ধ, হয়তোবা কিছুটা লক্ষ্যবিহীন ও অসংগঠিত ছিল। তবু এই ধ্বনিই সাহিত্য-সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র কে প্রেরণা যুগিয়েছিল 'বন্দেমাতরম্' সংগীত রচনায়।

উত্তরবঙ্গে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের অন্যতম কেন্দ্র ছিল মালদহ। মালদহে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যনির্বাহে বঙ্কিমচন্দ্র এসেছিলেন 1874 সালের 25 শে অক্টোবর। ছিলেন 1875 সালের জুন মাস পর্যন্ত। আজকের মকদুম পুরে বঙ্কিম বাজারের উল্টোদিকের বাড়িতে থাকতেন বঙ্কিমচন্দ্র। তিনি তার কর্মসূত্রে মালদহে থাকাকালীন সন্ন্যাসী বিদ্রোহের বহু নথিপত্র সরকারি কার্যালয়ে দেখেছিলেন। দেখেছিলেন কিভাবে সন্ন্যাসীরা 'ওঁ বন্দেমাতরম' ধ্বনি দিত তার রিপোর্ট। এই অভিজ্ঞতা থেকেই 1875 সালে বঙ্গদর্শন পত্রিকায় বঙ্কিমচন্দ্র প্রকাশ করলেন তার প্রখ্যাত সঙ্গীত বন্দেমাতরম । মালদহের প্রান্তরে প্রান্তরে বঙ্কিমের আসার একশো  বছর আগে উচ্চারিত হয়েছিল যে 'ওঁ বন্দেমাতরম' মহামন্ত্র, তার সন্ধান তিনি মালদহেই পেয়েছিলেন। এই বন্দেমাতরম সংগীত কে বঙ্কিমচন্দ্র 1882 সালে গ্রথিত করলেন আনন্দমঠ উপন্যাসে। আনন্দমঠ যে রচিত হয়েছিল উত্তরবঙ্গের সন্ন্যাসী বিদ্রোহের প্রেরণায়, সে কথা বঙ্কিম নিজেও স্বীকার করেছিলেন। মনে হয় বঙ্কিমের সেই প্রেরণার উৎস ছিল উত্তরবঙ্গের সেই সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, যার অন্যতম কেন্দ্র ছিল মালদহে।

সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম নেতা মজনু শাহ ময়মনসিংহে আছেন জানতে পেরে ইংরেজ সেনাপতিরা এক বিশাল বাহিনী নিয়ে সে দিকে রওনা দেন। খবর পেয়ে মজনু শাহ গোপনে মালদা চলে আসেন এবং সেখানে আশ্রয় নেন। মালদহ কুঠির রেসিডেন্ট ভাগলপুরের  কালেক্টরকে 1783 সালের 12 ই মার্চ একটি চিঠি দিয়ে জানাচ্ছেন যে, মজনু শাহ মালদহ জেলার বিভিন্ন কুঠিতে আচমকা আক্রমণ করে কুঠি লুট করছে। এই সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজদের বিশাল সৈনদল মালদহে আসে কিন্তু মজনুসহ ধরা পড়েননি। তিনি মালদহ ত্যাগ করতে সক্ষম হন।

1786 সালের 29 শে ডিসেম্বর ইংরেজদের সাথে মজনু শাহ এর বগুড়া জেলার মুন্ডু নামক স্থানে যুদ্ধ বাঁধে এবং কালেশ্বর নামক স্থানে ভয়ঙ্কর লড়াইয়ে মজনু শাহ আহত হন। এই অবস্থায় বিদ্রোহীরা মজনু শাহ কে গোপনে রাজশাহীর মধ্য দিয়ে তার পছন্দের ঘাঁটি মালদহে


নিয়ে আসে। মালদহে কিছুদিন থেকে সুস্থ হওয়ার পর মজনু শাহ গঙ্গা পেরিয়ে বিহারে চলে যান এবং এই সময়ের মধ্যে উত্তরবঙ্গে মুসা শাহ এর নেতৃত্বে বিদ্রোহী বাহিনী আবার উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। এদিকে মজনু শাহ যোগ দেন ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানীর বাহিনীর সঙ্গে।

Post a Comment

Previous Post Next Post