রাসবিহারী বোসু |
ভুমিকা - রাসবিহারী বসু (মে ২৫, ১৮৮৬–জানুয়ারি ২১, ১৯৪৫) ছিলেন ভারতে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের একজন অগ্রগণ্য বিপ্লবী নেতা এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির অন্যতম সংগঠক। দিল্লিতে গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের ওপর এক বোমা হামলায় নেতৃত্ব দানের কারণে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি সুকৌশলে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার নজর এড়াতে সক্ষম হন এবং ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে জাপানে পালিয়ে যান। তিনি ভারতের বাইরে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন ও পরবর্তীকালে নেতাজির হাতে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’-এর পরিচালনভার তুলে দেন৷
তার কর্মজীবনের বিভিন্ন সময়ে বসন্ত বিশ্বাস, ভাই বালমুকুন্দ, আমীর চাঁদ, অবোধ বিহারী, বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সান্যাল ও নগেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ বিপ্লবীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল।
আলিপুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায়ঃ-
জীবনের প্রথম দিকে তিনি নানা বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং আলিপুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে অভিযুক্ত হন।
দেরাদুনে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডঃ-
পরবর্তীকালে তিনি দেরাদুনে যান এবং সেখানে বন্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে হেড ক্লার্ক হিসেবে কাজে যোগদান করেন। দেরাদুনে তিনি গোপনে বাংলা, উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন।
দিল্লি ষড়যন্ত্র মামলাঃ-
বিপ্লবী হিসেবে তার অন্যতম কৃতিত্ব বড়লাট হার্ডিঞ্জের ওপর প্রাণঘাতী হামলা। বিপ্লবী কিশোর বসন্ত বিশ্বাস তার নির্দেশে ও পরিকল্পনায় দিল্লিতে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে বোমা ছোড়েন হার্ডিঞ্জকে লক্ষ্য করে। এই ঘটনায় পুলিশ তাকে কখনোই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সমগ্র ভারতব্যাপী সশস্ত্র সেনা ও গণ অভ্যুত্থান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাসবিহারী বসু। জনৈক বিশ্বাসঘাতকের জন্যে সেই কর্মকাণ্ড ফাঁস হয়ে যায়। এই মামলায় বিচারে ভাই বালমুকুন্দ ছাড়াও অপর তিনজন মাস্টার আমীর চাঁদ, অবোধ বিহারী ও বসন্ত বিশ্বাসের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয় ১৯১৫ সালের ১১ মে আমবালা জেলের ভেতর। বহু বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় তিনি ব্রিটিশ সরকারের সন্দেহভাজন হয়ে ওঠেন এবং শেষ পর্যন্ত দেশত্যাগে বাধ্য হন।
বেনারস ষড়যন্ত্র মামলাঃ-
১৯১৫ সালে গদর পার্টির তৎকালীন নেতৃত্বে ছিলেন বিপ্লবী রাসবিহারী বসু। তাঁর নেতৃত্বেই শচীন্দ্রনাথ সান্যাল সমগ্র উত্তরপ্রদেশে ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের মতো এক বিরাট বৈপ্লবিক আন্দোলন সংগঠিত করতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকদের চক্রান্তে এই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তাকে সাহায্য করে ছিলেন বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সান্যাল ও নগেন্দ্রনাথ দত্ত।
ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগঃ-
তারই তৎপরতায় জাপানি কর্তৃপক্ষ ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের পাশে দাঁড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় সমর্থন যোগায়। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৮-২৯ মার্চ টোকিওতে তার ডাকে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ বা ভারতীয় স্বাধীনতা লীগ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে তিনি সেই সম্মেলনে একটি সেনাবাহিনী গঠনের প্রস্তাব দেন।
সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে সাক্ষাৎঃ-
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২২ জুন ব্যাংককে তিনি লীগের দ্বিতীয় সম্মেলন আহ্বান করেন। সম্মেলনে সুভাষচন্দ্র বসু কে লীগে যোগদান ও এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাব গৃহীত হয়। যেসব ভারতীয় যুদ্ধবন্দি মালয় ও বার্মা ফ্রন্টে জাপানিদের হাতে আটক হয়েছিল তাদেরকে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগে ও লীগের সশস্ত্র শাখা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে যোগদানে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জাপানি সেনাকর্তৃপক্ষের একটি পদক্ষেপে তার প্রকৃত ক্ষমতায় উত্তরণ ও সাফল্য ব্যাহত হয়। তার সেনাপতি মোহন সিংকে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু তার সাংগঠনিক কাঠামোটি থেকে যায়। রাসবিহারী বসু ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আজাদ হিন্দ ফৌজ নামেও পরিচিত) গঠন করেন।
-------------
Post a Comment