ভূমিকা :

সুয়েজ সংকট বা ত্রিপক্ষীয় আগ্রাসন হল ১৯৫৬ সালে ইসরায়েল, ব্রিটেন ও ফ্রান্স কর্তৃক মিশর আক্রমণ। এর উদ্দেশ্য ছিল সুয়েজ খালের উপর পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ পুনপ্রতিষ্ঠিত করা এবং মিশরের রাষ্ট্রপতি জামাল আবদেল নাসেরকে ক্ষমতাচ্যুত করা।লড়াই শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ তিন আক্রমণকারী পক্ষকে সরে আসতে বাধ্য করে।


সংকটের প্রেক্ষাপট :

মিশরের উত্তর-পূর্বে ইংরেজ ও ফরাসিদের উদ্যোগে খনন করা একটি খাল হল- সুয়েজ খাল। 1759 খ্রিস্টাব্দে এর খনন কাজ শুরু হয় এবং 1859 খ্রিস্টাব্দে এতে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি 99 বছর মেয়াদে পরিচালনার দায়িত্ব পায়। কিন্তু, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই 1956 খ্রিস্টাব্দে মিশরের রাষ্ট্রপতি নাসের এক ঘোষণার মাধ্যমে সুয়েজ খাল কে জাতীয়করণ করেন। যাকে কেন্দ্র করেই সুয়েজ সংকটের সূচনা হয়।


সংকটের কারণ:- 

 

আন্তর্জাতিক করনের চেষ্টা :

 আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্স সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল। তাই তারা এই খালের আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণের দাবি জানালে নাসের বাঁধা দেন।


 বাঁধ নির্মাণে বাধা :

মিশরের রাষ্ট্রপতি নাসের মিশরের আর্থিক উন্নয়নের জন্য নীল নদের ওপর আসোয়ান বাঁধ নির্মাণ করতে চেয়ে ছিলেন। বিশ্বব্যাংক আর্থিক সাহায্য ঘোষণার কথা বলেও আমেরিকা ও ব্রিটেনের কারণে বিশ্ব ব্যাংক প্রস্তাব বাতিল করে। ফলে নাসের ক্ষুব্ধ হন।


 নাসিরের পশ্চাত্য বিরোধী মনোভাব :

নাসের সুয়েজে ইংল্যান্ডের সৈন্যের উপস্থিতি মেনে নিতে পারেনি। যার বিরোধিতা করে তিনি সোভিয়েত রাশিয়া, চিন প্রভৃতি রাষ্ট্রে সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। ফলে পাশ্চাত্য দেশ গুলি নাসেরের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়।


খালের জাতীয়করণ :

নাসের এবং পাশ্চাত্য দেশগুলির মধ্যে যখন মনোমালিন্য চরমে তখন নাসের সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল জাতীয়করণ করেন 1956 খ্রি: 26 জুলাই। জাতীয়করণের ঘোষণাতে বলা হয় - 


ক) সুয়েজ ক্যানালের নিয়ন্ত্রণ মিশরের হাতেই থাকবে।

খ) এই ক্যানালে আদায় করা কর আসোয়ান বাঁধ নির্মাণে খরচ করা হবে।


আক্রমণ ও যুদ্ধবিরতি :

1956 খ্রিস্টাব্দে 29 অক্টোবর ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইজরায়েল - 'মিশর' আক্রমণ করে সিনাই উপত্যকা দখল করে নেয়। কিন্তু জাতিপুঞ্জো, আমেরিকা প্রভৃতির উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত 22শে ডিসেম্বর যুদ্ধবিরতি ঘটে।



সুয়েজ সংকটের গুরুত্ব বা ফলাফল


আরব দুনিয়ার পশ্চিমি বিদ্বেষ: 

প্রথম আরব ইজরায়েল যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমেত পশ্চিমি শক্তিগুলি নিজেদের স্বার্থে নানাভাবে ইজরায়েলকে সাহায্য করেছিল। এমতাবস্থায় সুয়েজ সংকটকে কেন্দ্র করে মিশরের ওপর ইঙ্গ-ফরাসি আক্রমণ শুরু হলে মিশর-সহ গােটা আরব দুনিয়ায় পশ্চিম-বিরােধী মনােভাবের সৃষ্টি হয়।


সুদৃঢ় আরব ঐক্য: 

পশ্চিম-বিরােধী মনােভাব আরবদের আরও সংহত করে তােলে। তাদের ঐক্য আরও দৃঢ় হয়। মিশর ও সিরিয়া ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠিত হয় 'সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র'। নাসের হন তার প্রথম রাষ্ট্রপতি।


শত্রুতা বৃদ্ধি:

সুয়েজ সংকট মিশর ও ইজরায়েলের মধ্যে শত্রূতাকে চরমে নিয়ে যায়। ইজরায়েলকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।


মিশরের কর্তৃত্ব:

মিশর কর্তৃক সুয়েজ খাল জাতীয়করণকে আন্তর্জাতিক দুনিয়া স্বীকৃতি দিলে সুয়েজ খালের ওপর মিশরের কর্তৃত্ব দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।


 ইজরায়েলের মার্কিন নির্ভরতা বৃদ্ধি:

সুয়েজ সংকটের জেরে সংঘটিত দ্বিতীয় আরব-ইজরায়েল যুদ্ধে ইজরায়েল আর্থিক ও সামরিক দিক থেকে প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ক্ষতিপূরণের জন্য ইজরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়।


মিশরের রাষ্ট্রপতি নাসেরের এর কিছু চিত্র













Post a Comment

Previous Post Next Post