📌ভিয়েনা  বন্দোবস্তকে 'যুক্তিসঙ্গত ও রাষ্ট্রনীতিজ্ঞমূলক ব্যবস্থা' বলে মনে করার স্বপক্ষে কয়েকটি যুক্তি দাও।

 👉 ১) ভিয়েনা ব্যবস্থা ইউট্রেখটের সন্ধি অথবা ভার্সাই এর সন্ধি থেকে অনেক বেশি উদার ছিল, ২) ভিয়েনা বৈঠকের পর প্রায় দীর্ঘ ৪০ বছর ইউরোপে শান্তি বজায় ছিল, ৩) এই চুক্তিতে ফ্রান্সের প্রতি কঠোর প্রতিশোধ মূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এবং ৪) ভিয়েনা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিকতাবাদের সূচনা করে। তাই ভিয়েনা ব্যবস্থাকে যুক্তি সঙ্গত বলে অভিহিত করা হয়।



ইউরোপীয় শক্তি সমবায় (Concert of Europe)


 📌ইউরোপীয় শক্তি সমবায় বা Concert of Europe কবে ও কিভাবে গঠিত হয়? বা ইউরোপীয় শক্তি সমবায় বলতে কী বোঝায়?

👉 ইউরোপীয় শক্তি সমবায় ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়। ভিয়েনা বন্দোবস্ত ও ইউরোপের শান্তি বজায় রাখার জন্য ভিয়েনার নেতারা একটি সংগঠন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। এই উদ্দেশ্যে রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে 'পবিত্র চুক্তি' এবং ওই বছরই মেটারনিক 'চতুঃশক্তি চুক্তি' পেশ করেন। এই দুই চুক্তি স্বাক্ষরের ভিত্তিতে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে যে ঐক্য বন্ধন বা সমবায় গড়ে ওঠে তা ইউরোপীয় শক্তি সমবায় নামে পরিচিত।


 📌ইউরোপের শক্তি সমবায় বা কনসার্ট অফ ইউরোপ কেন গঠিত হয়?

👉 ইউরোপের শক্তি সমবায় গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল:  ১) ভিয়েনা বন্দোবস্ত অক্ষুন্ন রাখা, ২) ফ্রান্সের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি গুলি বজায় রাখা, ৩) পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ইউরোপে শান্তি অব্যাহত রাখা এবং ৪) ইউরোপে উদ্ভূত সমস্যাগুলির যথোপযুক্ত সমাধান করা। 


📌পবিত্র চুক্তি কি (Holy Alliance) কি?

👉 ভিয়েনা বন্দোবস্ত এবং ইউরোপের শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য ভিয়েনার নেতারা একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। এই উদ্দেশ্যে রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে যে খসড়া চুক্তি পেশ করেন তা পবিত্র চুক্তি নামে পরিচিত। এতে বলা হয় যে, স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলি একটি অখণ্ড ভ্রাতৃত্ববোধে আবদ্ধ হবেন এবং খ্রিস্টান ধর্মের ন্যায়, প্রেম ও শান্তির আদর্শে তাদের দেশকে পরিচালিত করবেন। 


📌চতুঃশক্তি চুক্তি (Quadruple Alliance) কি?

👉 ভিয়েনা বন্দোবস্ত ও ইউরোপের শান্তি বজায় রাখার জন্য ভিয়েনা কংগ্রেসের নেতারা একটি সংগঠন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। এই উদ্দেশ্যে মেটারনিক ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে চতুঃশক্তি চুক্তি পেশ করেন। অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, প্রাশিয়া ও ইংল্যান্ড এই চারটি শক্তি এই চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর ফলে ইউরোপীয় শক্তি সমবায় গড়ে ওঠে।



 📌'ট্রপোর ঘোষণাপত্র' (Protocol of Troppau) কি? 

👉 ইউরোপে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে মেটারনিক এর উদ্যোগে ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে শক্তি সমবায়ের ট্রপোর বৈঠকে একটি ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। এতে বলা হয় যে, কোন রাষ্ট্রের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অথবা অন্য কোন রাষ্ট্রের পক্ষে বিপদজনক বিদ্রোহ বা বিপ্লব ঘটলে শক্তি সমবায় তা প্রয়োজনে বল প্রয়োগকরে দমন করবে। এটি টোপর ঘোষণাপত্র নামে খ্যাত।



 📌ইউরোপীয় শক্তি সমবায়ের বৈঠকগুলি কবে, কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল? 

👉ইউরোপীয় শক্তির সমবায়ের মোট পাঁচটি বৈঠক বসেছিল:  ১) ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে এই-লা-শ্যাপেল,  ২) ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে ট্রপো, ৩) ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে লাইব্যাক, ৪) ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে ভেরোনা এবং ৫) ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে।

 


📌 ইউরোপীয় শক্তি সমবায় ব্যর্থ হল কেন?

👉ইউরোপীয় শক্তি সমবায়ের ব্যর্থতার প্রধান কারণ গুলি হল: 1) 1818 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স শক্তি সমবায়ের সদস্য হওয়ায় শক্তি সমবায় গঠনের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা বহুলাংশে ফুরিয়ে যায়। 

২) সদস্য রাষ্ট্রগুলির জাতীয় স্বার্থ ও  উদ্দেশ্যের বিভিন্নতার জন্য সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। 

৩) ইংল্যান্ডের নিরন্তর অসহযোগিতা ও শক্তি সমবায় পরিত্যাগ শক্তি সমবায়কে দুর্বল করে দেয়। 

৪) উদারতান্ত্রিক ইংল্যান্ডের সঙ্গে স্বৈরতান্ত্রিক অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার আদর্শগত সহাবস্থান সম্ভব ছিল না।

Post a Comment

Previous Post Next Post