মেটারনিক


মেটারনিকের যুগ বলতে কী বোঝায়? 

১৮১৪-১৫ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েনা বৈঠকের পর থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে ইউরোপীয় রাজনীতির প্রধান নিয়ন্ত্রা ছিলেন অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স মেটারনিক তাই ঐতিহাসিক ফিশার ওই সময়কালকে মেটারনিকের যুগ (১৮১৫ থেকে ৪৮) বলে অভিহিত করেছেন।


 মেটারনিকতন্ত্র বা মেটারনিক এর ব্যবস্থা (Metternich System) বলতে কী বোঝায়?

 মেটারনিক ছিলেন ঘোরতর রক্ষণশীল ও সবরকম প্রগতিমূলক ভাবধারার বিরোধী। তাই অস্ট্রিয়া সহ গোটা ইউরোপে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে এবং ফরাসি বিপ্লব প্রসূত গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি ভাবধারার প্রসার প্রতিহত করতে তিনি যে দমন মুলক নীতি ও কার্যপদ্ধতি গ্রহণ করেন, তা মেটারনিক এর ব্যবস্থা বা মেটারনিকতন্ত্র নামে পরিচিত।


 মেটারনিকের ব্যবস্থা বা মেটারনিক তন্ত্রের মূল লক্ষ্য কি ছিল? অথবা, মেটারনিকের রাজনৈতিক মতাদর্শের মূল কথা কি ছিল? 

মেটারনিকের মতাদর্শের মূল কথা বা মূল লক্ষ্য ছিল : ১)  অস্ট্রিয়া সহ গোটা ইউরোপে রক্ষণশীলতাস্থিতাবস্থা বজায় রাখা, ২) ফরাসি বিপ্লব প্রসূত গণতন্ত্র, উদারতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি প্রগতি মূলক ভাবধারার গতিরোধ করা এবং ৩) ইউরোপীয় রাজনীতিতে অস্ট্রিয়ার স্বার্থ ও নিরঙ্কুশ প্রাধান্য অক্ষুন্ন রাখা।


 কার্লসবাড্ ডিক্রি (Carlsbad Decree) কে, কবে ও কেন জারি করেন?

 জার্মান বুন্ডের সভাপতি হিসেবে অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী মেটারনিক ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে কার্লসবাড্ ডিক্রি জারি করেন

 ১৯ শতকের প্রথম দিকে জার্মানিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্র আন্দোলনের ফলে কোৎজেবু (Kotzebu) নামে জনৈক প্রতিক্রিয়াশীল সাংবাদিক নিহত হন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জার্মানির জাতীয়তাবাদী ছাত্র আন্দোলন দমন করার উদ্দেশ্যে মেটারনিক কার্লসবাড্ ডিক্রি জারি করেন। 


কার্লসবাড্ ডিক্রি কী?

জার্মান বুন্ড এর সভাপতি হিসেবে অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী মেটারনিক ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে কার্লসবাডে জার্মান নৃপতিদের একটি সভা আহবান করেন এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্র আন্দোলন দমন করার জন্য কয়েকটি হুকুম নামা জারি করেন:  এগুলি হল - ১) জার্মানির ছাত্র সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করা হয়, ২)  সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হয় এবং ৩) ছাত্র-অধ্যাপকদের কার্যকলাপ এর উপর নজর রাখার জন্য গুপ্তচর নিয়োগ করা হয়। এইসব হুকুমনামা কার্লসবাড্ ডিক্রি নামে পরিচিত। 


মেটারনিক কে ইউরোপের পুলিশম্যান বলা হয় কেন?

প্রাক বিপ্লব যুগের অবস্থা বজায় রাখা এবং ইউরোপে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে মেটারনিকের উদ্যোগে ইউরোপীয় শক্তি-সমবায় গঠিত হয় এবং এটি একটি আন্তর্জাতিক পুলিশ বাহিনীর মতো কাজ করে। এর সাহায্যে এবং ব্যক্তিগত কূটনৈতিক দক্ষতায় তিনি দীর্ঘদিন ইউরোপে এক প্রতিক্রিয়াশীল শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেন। তাই মেটারনিককে  ইউরোপের পুলিশম্যান বলে অভিহিত করা হয়।



মেটারনিকতন্ত্রের ব্যর্থতার কারণ কি?

১) মেটারনিকতন্ত্র ছিল নেতিবাচক, সংকীর্ণ ও প্রতিক্রিয়াশীল, ২) মেটারনিক যুগধর্মকে অস্বীকার করে পুরনো ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন বলে তিনি যুগের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, ৩) ইংল্যান্ডের মত শক্তিশালী দেশের নিরন্তর বিরোধিতা তাকে দুর্বল করে দেয় এবং ৪) ১৮৩০ ও ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের অভিঘাত মেটারনিকতন্ত্রকে ব্যর্থ করে দেয়। 


কবে ও কিভাবে মেটারনিকের পতন ঘটে? 

ফ্রান্সে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রভাবে ওই বছর মার্চে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় প্রতিক্রিয়াশীল শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক তীব্র আন্দোলন দেখা দেয়।  আন্দোলনের চাপে মেটারনিক পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং ইংল্যান্ডে পালিয়ে যান। এইভাবে প্রায় চল্লিশ বছর শাসনের পর মেটারনিকের পতন ঘটে।


🌿🔷THE HISTORY EXPLORING 🔷🌿

Post a Comment

Previous Post Next Post