Q. সার্কের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আলোচনা কর। SAARC এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর। 8
Shuvajoy Roy
M.A/B.Ed/Net/Set
Department of History & Culture
YouTube : The History Exploring
ভূমিকা:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কালে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার বিন্যাসে যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সূচিত হয় তা হল আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আঞ্চলিক সংস্থা গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ। আসিয়ান ও ইউরোপীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর সাফল্য বিষয়টিকে সকলের সামনে তুলে ধরে। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির মধ্যেও এব্যাপারে উদ্যোগ ও উৎসাহ থেকে শেষ পর্যন্ত আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে গঠিত হয় সার্ক বা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (SAARC)।
■ সার্ক গঠনের প্রেক্ষাপট:
সার্কের প্রতিষ্ঠার মস্তিষ্কপ্রসূত ধারণাটি ছিল বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের। তিনি চেয়েছিলেন যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি অর্থনীতি, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে পারস্পরিক আদানপ্রদান ও যোগাযোগ সুদৃঢ় এবং সহজ করার মাধ্যমে একে অপরের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক। তিনি 1979 খ্রিস্টাব্দে শ্রীলঙ্কা সফরের সময় সেখানকার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আসিয়ান বা ইউরোপীয় কমিউনিটির আঙ্গিকে একটি আঞ্চলিক সংস্থা গঠনের বিষয়টি আলোচনা করেন। 1980 খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রস্তাব দেন সকল দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রপ্রধানদের একটি শীর্ষ বৈঠকের এবং ওই বৈঠকে তাঁর প্রস্তাবকে সমর্থন করা হয়।
■ সার্ক-এর প্রতিষ্ঠা:
অবশেষে 1985 খ্রিস্টাব্দের 7-8 ডিসেম্বর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে সার্ক (SAARC)-এর প্রতিষ্ঠা হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হোসেন মোহম্মদ এরশাদ সার্ক-এর প্রথম সম্মেলনের উদ্বোধন করেছিলেন এবং তিনি সার্কের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সার্কের প্রথম মহাসচিব নিযুক্ত হন বাংলাদেশের কূটনীতিবিদ আবুল হাসান। পরবর্তীকালে নেপালের রাজা বীর বিক্রম শাহ 1987 খ্রিস্টাব্দের 16 জানুয়ারি কাঠমান্ডুতে সার্কের স্থায়ী সচিবালয় স্থাপন করেছিলেন।
■ সার্ক-এর উদ্দেশ্য:
সার্ক গঠিত হয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি রাষ্ট্র যেমন- ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও মালদ্বীপকে নিয়ে। পরবর্তীকালে আফগানিস্তানও এর সদস্য হয়েছে। সার্কের উদ্দেশ্যগুলি ছিল-
I. দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের কল্যাণ বিধান এবং জীবনযাত্রার মনোন্নয়ন করা।
II. দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ করা।
III. সার্ক-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা এবং কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।
IV. সার্ক-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির সামাজিক, অর্থনৈতিক ও কারিগরি ক্ষেত্রে পারস্পরিক আদানপ্রদান ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
V. আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক স্তরের অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।
VI. সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, বোঝাপড়া ও সংবেদনশীলতার পরিবেশ তৈরি করা।
VII. সংস্কৃতির আদানপ্রদান ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ঘটানো।
■ উপসংহার:
এটা ঠিক যে, বহু সময়ের পর সার্ক-এর প্রতিষ্ঠা হয় এবং আজ পর্যন্ত বহু সম্মেলন বৈঠক হয়েছে। সার্ক-এর গুরুত্ব এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির কাছে আজও সক্রিয়। প্রায় দু-দশকের ওপর দক্ষিণ এশিয়ার মতো একটি সমস্যাবহুল এবং নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় থাকা অঞ্চলে আন্তঃরাষ্ট্র সহযোগিতার কেন্দ্রস্থল হিসেবে সার্ক কাজ করে চলেছে।
💠💠💠💠💠💠
Post a Comment