Q. জাদুঘর কাকে বলে? জাদুঘরের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা কর।
ভূমিকা:
প্রাচীনকালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগ্রহশালা গড়ে উঠতে দেখা গেছে। যেমন- 1471 খ্রিস্টাব্দে সাধারণের জন্য গড়ে ওঠা পৃথিবীর প্রাচীনতম সংগ্রহশালা ক্যাপিটোলাইন মিউজিয়াম। পোপ চতুর্থ সিক্রোটাস-এর ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা রোমের প্রাচীন ভাস্কর্যগুলি এই মিউজিয়ামে স্থান পেয়েছে। আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য জাদুঘরের অস্তিত্ব বর্তমান। এই জাদুঘরগুলিতে সংরক্ষিত বিভিন্ন বস্তু ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশ করে। শিল্প, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়গুলির ওপর ভিত্তি করে বর্তমানে মিউজিয়ামের বিভিন্নপ্রকার শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে।
নিম্নে বিভিন্নপ্রকার মিউজিয়াম সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
• ইতিহাস মিউজিয়াম:
বিশেষ অঞ্চলের বা সামগ্রিকভাবে ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষীকরণযুক্ত বিষয়গুলি এখানে স্থান পায়। পুরাতাত্ত্বিক বস্তু, অস্ত্রশস্ত্রাদি, যুদ্ধ সরঞ্জাম, লিপি, মুদ্রা, বিভিন্ন নথিপত্রাদিসহ নানান বস্তুসামগ্রী এখানে স্থান পায়। যেমন-রোমান ফোরাম জাদুঘর।
• ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘর:
ইতিহাস বিজরিত কোনো স্থান বা বাড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সংগ্রহশালাকে ঐতিহাসিক গৃহ জাদুঘর বলা হয়। কোনো ঐতিহাসিক ব্যক্তির জন্মস্থান, বাসগৃহ, ইতিহাসখ্যাত বা কুখ্যাত স্থান, কোনো বধ্যভূমি এই ধরনের মিউজিয়ামের উদাহরণ। যেমন-মুরশিদাবাদের হাজারদুয়ারি, কোচবিহারের রাজবাড়ি।
• প্রত্নতাত্ত্বিক মিউজিয়াম:
পৃথকভাবে পুরাতাত্ত্বিক বস্তুর সংগ্রহশালা প্রত্নতাত্ত্বিক মিউজিয়াম নামে পরিচিত। যেমন- ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া মিউজিয়াম।
• জীবন্ত জাদুঘর:
যে জাদুঘরে প্রাচীনযুগের মানুষের জীবনযাত্রা অনুকরণ করে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাচীন পরিবেশ, সংস্কৃতি ইত্যাদি কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করে দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হয় তখন তাকে জীবন্ত জাদুঘর বলে। যেমন-সুইডেনের স্কানসেন মিউজিয়াম।
• সামরিক মিউজিয়াম:
জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধরনের মিউজিয়াম কোনো রাষ্ট্র গড়ে তোলে। অস্ত্রশস্ত্র, সামরিক বাহিনীর উপকরণ, সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম, যুদ্ধকালীন নথি, যুদ্ধের সময় জনজীবন ইত্যাদি বিষয়গুলি এই প্রকার মিউজিয়ামে স্থান পায়।
যেমন-কানাডিয়ান ওয়ার মিউজিয়াম।
• শিল্প মিউজিয়াম:
মিউজিয়ামগুলির মধ্যে অন্যতম আকর্ষণীয় হল শিল্পকলা সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য প্রদর্শিত শিল্প মিউজিয়াম। দৃশ্যকলা; চিত্রশিল্প; স্থাপত্য; কাচ; পাথর; কাঠ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় দিয়ে তৈরি মূর্তি; আসবাব; চারুশিল্প; হাতের কাজ ইত্যাদি সংরক্ষণ করে শিল্প মিউজিয়াম। যেমন-ফ্লোরেন্স শহরের Uffizi Gallery
• বিজ্ঞান জাদুঘর:
বিজ্ঞান, প্রযুক্তিগত বিবর্তন, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও সেগুলির কলাকৌশল ইত্যাদি বিজ্ঞানবিষয়ক প্রদর্শনক্ষেত্র হল বিজ্ঞান জাদুঘর। যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় অবস্থিত 'মিউজিয়াম অফ সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি'।
• প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরঃ
প্রকৃতি এবং সংস্কৃতি এই ধরনের জাদুঘরের প্রদর্শনের বিশেষত্ব। প্রাচীনকালের প্রাকৃতিক বিষয়, ডাইনোসরের জগৎ, জীববিদ্যা, সমুদ্রবিদ্যা, নৃতত্ত্ববিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ের নিদর্শনের মাধ্যমে এই জাদুঘরগুলির বিবর্তন, জীববৈচিত্র্য প্রভৃতি বিষয়ে দর্শকদের শিক্ষাদান করে। যেমন-লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম।
• শিশুদের জাদুঘর:
সম্পূর্ণভাবে শিশুদের কথা মাথায় রেখে প্রদর্শনের জন্য এই ধরনের জাদুঘর গড়ে তোলা হয়। শিশুদের অপ্রথাগত শিক্ষার জন্য এটি বিশেষভাবে পরিকল্পিত। যেমন-কোলকাতায় Nehru Children's Museum
• চলমান জাদুঘরঃ
যখন কোনো চলমান যানের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ঐতিহাসিক বা দুর্লভ নিদর্শনসমূহকে দর্শকদের সামনে প্রদর্শন করা হয়, তখন তাকে চলমান জাদুঘরব বলে।
Post a Comment