HS HISTORY SUGGESTIONS 2024

Q. জাদুঘর কাকে বলে? ইতিহাস রচনায় জাদুঘরের গুরুত্ব আলোচনা কর। 


জাদুঘর: 

ইংরেজি Museum শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে জাদুঘর সংগ্রহশালা, প্রদর্শনশালা ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। সাধারণ অর্থে Museum বা জাদুঘর হল একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত সমস্ত ধরনের বস্তু সামগ্রী সংগ্রহের সামর্থ অনুযায়ী সংগ্রহ করে রাখা হয় সেগুলির যত্ন নেওয়া হয় এবং জনসাধারণের মধ্যে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।


Museum শব্দটির উৎপত্তি সম্পর্কে একাধিক মত রয়েছে। গ্রিক শব্দ মৌসিয়ান (Mouseion) শব্দ থেকে Museum শব্দটি এসেছে। যার অর্থ পুরাণের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক দেবী মিউসের মন্দির বা বাসস্থান। এটিকে দার্শনিক বা পণ্ডিত ব্যক্তিদের স্থান বলেও গণ্য করা হত। নয়জন গ্রিক দেবদেবী যারা কাজ ও কলাবিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী এটি তাদের মন্দির হিসেবে বিবেচিত হত।


অনেকে মনে করেন অতীত দিনে মিউজিয়াম বলতে বোঝাত দার্শনিক আলোচনার একটি স্থান। আবার অন্য একটি তথ্যে ছোটো পাহাড়কে গ্রিকরা মিউজিয়াম বলত। ওই ছোটো পাহাড়ে মাওসিয়াস নামে এক ব্যক্তি গান গাইতেন। সেখানেই তিনি মারা যান এবং তাঁকে সেখানেই কবর দেওয়া হয়। অর্থাৎ মাওসিয়াসের বাসস্থান অর্থে মৌসিয়ন শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।


পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইউরোপে ইটালির ফ্লোরেন্সের লবেস্ত্রো দি মেদিচির সংগ্রহশালাকে বোঝাতে মিউজিয়াম শব্দটি ব্যবহৃত হত। সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপে মিউজিয়াম শব্দটি জ্ঞানের সংরক্ষণ অর্থে ব্যবহৃত হত। লন্ডনে The British Museum (1753 খ্রিস্টাব্দে) প্রতিষ্ঠার পর মিউজিয়াম শব্দটি একটি প্রতিষ্ঠানিক রূপ নেয় এবং জনসাধারণের উদ্দেশ্য সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করার সূত্রপাত ঘটে।



অতীত পুনর্গঠনে মিউজিয়ামের ভূমিকা: 

অতীত বা ইতিহাস পুনর্গঠনে মউজিয়াম বা জাদুঘর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন-


ইতিহাসের বিষয়বস্তুকে তুলে ধরা: 

সমাজবিজ্ঞান হিসেবে ইতিহাসের বিষয়বস্তুকে বাস্তব করে তোলা অত্যন্ত কঠিন। যে অতীতে পাঠক ছিল না সেই অতীতকে 'পাঠকের সামনে মূর্ত করে তোলা খুব কঠিন হয়ে পরে। কিন্তু মিউজিয়াম বা সংগ্রহশালাগুলি পরিদর্শনের মাধমে শিক্ষার্থীদের কাছে সেই অতীত বিষয়কে মূর্ত করে তোলার চেষ্ঠা করা যায়।


অতীত বিষয়ে অসুবিধা দূর করা: 

সমাজ তার অতীতকে জানতে চায়, তার ঐতিহ্যকে জানতে চায়। সে তার অতীত জেনে পুলকিত ও শিহরিত হয়। কিন্তু অতীত সম্পর্কে অনেক বিষয়ে অস্পষ্ঠতা, নীরবতা ও বিচ্ছিন্নতা ইতিহাস আগ্রহী মানুষকে অসুবিধায় ফেলে। তাদের এই অসুবিধা দূর করতে অনেককাংশেই সাহায্য করে মিউজিয়াম।


অতীত সমাজ ও সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করা: 

যুগের পরিবর্তনের ফলে সমাজ ও সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটে। মিউজিয়ামগুলি শিল্প, সংস্কৃতি, সমাজে মানুষের গৃহ তৈরির পদ্ধতি, ব্যবহৃত সামগ্রীর সংরক্ষণ বিষয়ে অতীত সমাজ-সংস্কৃতি বুঝতে সাহায্য করে। ফলে সমাজ ও সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বুঝতে সুবিধা হয়।


ইতিহাস অনুসন্ধানে আগ্রহ বৃদ্ধি করা: 

ইতিহাসের বিষয় হিসেবে মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়-আদিম মানুষের কঙ্কাল, জীবাশ্ম; অতীতকালে ব্যবহৃত বিভিন্ন হাতিয়ার, পাথর ও ধাতুর তৈরি বস্তুসামগ্রী; লিপি, চিত্র, ভাস্কর্য, অলংকার, মুদ্রা, মূর্তি, বিভিন্ন যুগে পরিধেয় বস্ত্র, ব্যবহৃত অস্ত্র, যুদ্ধ সরঞ্জাম, যন্ত্র, স্থাপত্যের নমুনা ইত্যাদি। এগুলি ইতিহাসের পাঠকদের মনে কেবল ভাবগত অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে না তাদের ইতিহাস অনুসন্ধানি হতেও সাহায্য করে।


ইতিহাস গবেষণায় সহায়তা প্রদান করা: 

মিউজিয়ামে সংরক্ষিত ও প্রদর্শিত বস্তুগুলি ইতিহাসের উপাদান হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইতিহাস গবেষণা, চর্চা ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে মিউজিয়ামের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।


■উপসংহার: 

সুতরাং ইতিহাস বা অতীত সংগঠনে মিউজিয়ামের উপযোগিতা প্রশ্নাতীত। মিউজিয়ামের উপাদানগুলি শিক্ষার্থীদের মনে সহজে রেখাপাত করে। ফলে মিউজিয়ামে প্রদর্শিত বস্তুর মডেল তৈরি করতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা যায়। ইতিহাস শিক্ষার্থীদের কল্পনা ও মননশক্তি তৈরি করতে মিউজিয়াম সাহায্য করে। এই উপযোগিতার কথা মাথায় রেখে উৎসাহের সঙ্গে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে বিভিন্ন চার্ট, মডেল তৈরি করে বা স্থানীয় প্রত্নবস্তু সংগ্রহ করে সেটিকে একটি মিউজিয়াম কক্ষ হিসেবে পরিণত করা যেতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।


উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন 2024

Post a Comment

Previous Post Next Post