Q. জোট নিরপেক্ষ নীতি বলতে কী বোঝো এই নীতির লক্ষ, উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। (৮)
Shuvajoy Roy
M.A/B.Ed/Net/Set
Department of History & Culture
YouTube : The History Exploring
জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য ভারতসহ অন্যান্য সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলি একত্রিত হয়ে যে জোট গঠনের নীতি গ্রহণ করে সেই জোটই হল 'জোটনিরপেক্ষ নীতি'। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে একদিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র অপরদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে এক ঠান্ডা লড়াই (অস্ত্রহীন) চলতে থাকে। এই যুদ্ধই যাতে পরবর্তীতে ভয়ংকর রূপ না নেয় বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি না করে। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলি উক্ত দুটি পক্ষের মধ্যে কোনটিতেই যোগদান না করে যে নিরপেক্ষ জোট গঠনের নীতি গ্রহণ করে, তারই নাম জোটনিরপেক্ষ নীতি। যদিও পশ্চিমি শক্তি জোটনিরপেক্ষ নীতিকে মূলত ঠান্ডা লড়াই-এর বিরুদ্ধে নির্জোট আন্দোলন বলেছেন।
জোটনিরপেক্ষ নীতির মূল লক্ষ্য:
জোটনিরপেক্ষ নীতির রূপকার ও প্রথম প্রবক্তা হলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। জোটনিরপেক্ষ নীতিতে যোগদানকারী কয়েকটি দেশ হল-মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ঘানা, যুগোশ্লাভিয়া ইত্যাদি। জওহরলাল নেহরুর মতে, স্বাধীন ও পক্ষপাতহীন নীতি গ্রহণ করে পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ছিল জোটনিরপেক্ষ নীতির মূল লক্ষ্য।
জোটনিরপেক্ষ নীতির মূল উদ্দেশ্য:
জোটনিরপেক্ষ নীতির প্রধান উদ্দেশ্যগুলি নিম্নরূপঃ
① বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ।
② উপনিবেশ ও বর্ণবৈষম্যবাদের বিরোধিতা করা।
③ কোনো কিছু বিরোধের ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনার মাধ্যমে সেইসব বিরোধের সমাধান করা।
④ আণবিক অস্ত্রের বিরোধিতা করা।
⑤ বিশ্বকে নিরস্ত্রীকরণে উদ্যোগ গ্রহণ করা।
⑥ জোটনিরপেক্ষ নীতির একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল চিরন্তন আবেগকে ধরে রাখা। সেখানে রুশ সাম্যবাদ বা ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদ তথা মার্কিন পুঁজিবাদের জায়গা নেই।
জোটনিরপেক্ষ নীতি প্রসঙ্গে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধি এক সময় বলেছেন যে, "ভারতের জোটনিরপেক্ষতা সম্পূর্ণ ইতিবাচক, আদর্শ প্রসূত এবং বিবেচনাহীন নিরপেক্ষতা নয়।"
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বের রাজনৈতিক শক্তি বিনাশের বার্তাবরনে বিশ্বের পরস্পর বিরোধী দুটি শক্তি জোটের উদ্ভব হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের শক্তি জোটের সঙ্গে সম- দূরত্ব বজায় রেখে, স্বাধীন নীতি নির্ধারণের ব্যাপারে আগ্রহী তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে সরিক হয়েছিল। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল নিম্নরূপ-
সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতার বিরোধ:
জোট নিরপেক্ষতার অর্থ বিশ্বের সমস্ত রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে সমদূরত্ব বজায় রেখে নিরপেক্ষ বা নিঃসঙ্গ থাকা নয়, বরং সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ, বর্ণ বৈষম্য প্রভৃতির বিরিদ্ধে থেকে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান রচনা করাই হল জোট নিরপেক্ষ।
আন্তর্জাতিক শান্তির সহায়ক:
শান্তিপূর্ণ ভাবে পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে না উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মোকাবিলা করার পথ প্রশস্ত করে জোট নিরপেক্ষতা। আন্তর্জাতিক বিবাদ, যুদ্ধ ভীতি প্রভৃতির পাশাপাশি কোনো দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপও করতে আগ্রহী নয় জোটে নিরপেক্ষ দেশগুলি।
পারস্পরিক সহযোগিতা:
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে যুক্ত প্রতিটি রাষ্ট্র পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান-এ স্বচেষ্ট হবে এর ফলে বিশ্বের শান্তির বারতাবরন রচিত হয়।
ভৌগলিক অখণ্ডতার রক্ষা:
জোট নিরপেক্ষ দেশগুলি নীতিগত ভাবে ভৌগলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীল থাকে।
প্রাগতিশীল পররাষ্ট্রনীতির সহায়ক:
জোট নিরপেক্ষ হল পররাষ্ট্রনীতি গ্রহনের একটি পন্থা পদ্ধতি এই নীতির মাধ্যমে জোট নিরপেক্ষ দেশগুলি প্রগতিশীল পররাষ্ট্রনীতি গ্রহন করতে স্বক্ষম।
উপসংহার:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ঠান্ডা লড়াই-এর মতো উত্তেজনাপূর্ণ বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন সারা পৃথিবীব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়েছিল। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির অর্থনৈতিক বিকাশ, স্বাধীন ও সার্বভৌম অস্তিত্ব রক্ষার কাজে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
💠💠💠💠💠
Post a Comment