ইতিহাসের সাথে ভূগোলের সম্পর্ক আলোচনা করো? 

(M.A 1St Sem)

University of Gour Banga

ইতিহাসের ও ভূগোল হল মহাবিজ্ঞানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা এবং তাদের সম্পর্ক অতি নিবিড়। প্রমথ চৌধুরীর মতে, ইতিহাসের ছবি আঁকতে গেলে প্রথমে ভূগোলের জমি করতে হয়। কোন একটি দেশের সীমার মধ্যে কালকে আবদ্ধ করতে না পারলে - সেই কালের পরিচয় দেওয়া যায় না। অসীম আকাশের ভূগোল নেই বা অনন্তকালেরও ইতিহাস নেই। বাস্তবিকপক্ষে ভূগোলের পটভূমিতে ইতিহাসের প্রতিষ্ঠা যথার্থ। ইতিহাস রচনার জন্য কাল চেতনার পাশাপাশি স্থান চেতনা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হেরোডোটাস সর্বপ্রথম ইতিহাসের সাথে ভূগোলের নিবিড় সম্পর্কের কথা বলেন। 




 ভূগোল ও ইতিহাসের সম্পর্ক:- কোনো দেশের ইতিহাসের উপর সেই দেশের ইতিহাসের ভৌগলিক প্রভাব অতি গুরুত্বপূর্ণ। সব ইতিহাসেরই দুটি চোখ, কাল ও স্থান বা ভূগোল অর্থাৎ ইতিহাসের দুটি চোখের একটি চোখ হলো ভূগোল। প্রকৃতপক্ষে কোনো দেশ বা জাতির চরিত্র ও তার ইতিহাস নির্ভর করে ওই দেশের জল হওয়া ও ভৌগোলিক পরিবেশের উপর। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কিংবা দেশের বিভিন্ন প্রদেশের ইতিহাসের মূলগত পার্থক্যের জন্য দায়ী ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। ইতিহাস ও ভূগোলের সম্পর্ক নির্ধারণে ইমানুয়েল কান্টের বক্তব্য থেকে বোঝা যায় মানবসভ্যতার কালানুক্রমিক বর্ণনা হলো ভূগোল। কাল ও স্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিহাস ও ভূগোলের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। প্রথমটি হলো ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য বস্তু ও অবস্থার কাহিনী। আর পরবর্তী বিষয়টি হলো স্থানভিত্তিক বিবরণ। প্রকৃতপক্ষে ইতিহাস হল কাহিনী প্রধান ও ভূগোল হল বর্ণনামূলক। ইতিহাস ও ভূগোল স্থান ও কাল নির্দেশ করে আমাদের উপলব্ধিকে পরিপূর্ণ করে। 


ইতিহাসের উপর ভূগোলের প্রভাব:- যে কোনো দেশ বা জাতির জাতীয় ইতিহাস রচনায় ভৌগোলিক উপাদানের প্রভাব অনস্বীকার্য। কোনো দেশের ভৌগোলিক অবস্থান সেই দেশের জাতীয় ইতিহাস ও দেশবাসীর জাতীয় ইতিহাস রচনায় সুদুরপ্রসারি ভূমিকা পালন করে। পর্বত, নদী, মালভূমি, জলবায়ু প্রভৃতি ভৌগলিক উপাদান মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতি ক্রমবিকাশে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। মানব গোষ্ঠীর জীবনে ভৌগোলিক পরিবেশের প্রভাব, জীবনযাত্রার ক্রিয়াকলাপ ও শ্রমদক্ষতায় বিশেষত্ব এনে দেয়। তাই কোনো দেশের ইতিহাসকে সুষ্ঠু রূপে জানতে গেলে ওই দেশের ভৌগলিক পটভূমি সম্পর্কে প্রথমে পরিচিত থাকা দরকার।


ভূগোল ইতিহাস কে নানাভাবে নিয়ন্ত্রিত করে। প্রতিটি দেশের ইতিহাস ভৌগলিক উপাদান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। টাইগ্রিস ইউফ্রেটিস নদীর তীরে মেসোপটেমিয়া সভ্যতা, ইয়াংসিকিয়াং নদীর তীরে চীন সভ্যতা, সিন্ধু নদীর তীরে - গাঙ্গেয় সিন্ধু সভ্যতা গুলি গড়ে উঠেছিল। কোন না কোন নদীর তীরে আবার মগধের উত্থান ঘটেছিল। ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য ব্রিটেনের পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত হয়। আবার পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডের সামুদ্রিক বাণিজ্য ও উপনিবেশ দখলের লড়াইয়ের সাফল্যের মূলে ছিল ভৌগোলিক পরিবেশ। আবার ভৌগোলিক অনুকূল জলবায়ু খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যতা ডেকে আনে। গ্রীস দেশ সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় তারা সমুদ্র বাণিজ্য তৎপর হয়। এছাড়া হিমালয় পর্বতমালা ও আসামের বনভূমির বৈদেশিক আক্রমণের হাত থেকে ভারতকে রক্ষা করে। রাশিয়ার প্রচন্ড শীত নেপোলিয়ন ও হিটলারের পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মুঘল, পাঠান প্রভৃতি জাতি খাইবার, বোলান গিরিপথ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে । আবার ওই পথ ধরে ভারতের সভ্যতা, সংস্কৃতি এশিয়ার অন্যান্য দেশে বিস্তার লাভ করে। ফলে ভারতের সাথে এশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ভারতের নদনদী ভারতকে সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা দেশে পরিণত করেছে। আবার ভারতের প্রাকৃতিক সম্পদের লোভে বিদেশীরা হানা দিয়েছে কিন্তু ভারতে তিনদিক সমুদ্র থাকায় জলপথে বহিঃশত্রুর আক্রমণ এর সম্ভাবনা কমেছে। 


পরিশেষে বলা যায় যে ইতিহাস ও ভূগোলের মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক যুক্ত। যার কিছু ইতিবাচক দিক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে। বর্তমানে নেতিবাচক দিকের তুলনায় ইতিবাচক দিকের সংখ্যাই বেশি। মিসেলের মতে, ইতিহাসের বিশ্লেষণ কুখ্যাত ভৌগোলিক তথ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। ভৌগোলিক ভিত্তি ছাড়া ইতিহাসের মানুষের ক্রিয়া-কলাপ বর্ণনা করা যায় না।


[অন্যান্য নোটস এর জন্য কমেন্ট করো ]

 

📌Net/Set  Free Mock Test

Like our Facebook Page 👍👍

Post a Comment

Previous Post Next Post